চকরিয়া প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের পেকুয়ার খরস্রোতা রূপাই খাল দখলে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। সম্প্রতি এই খালের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মৎস্য ঘের ও বসতভিটা। স্থানীয় ভূমিদস্যু চক্রের সদস্যরা দিনের পর দিন এক্সক্যাভেটর দিয়ে এই খাল দখল অব্যাহত রেখেছে। সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত এবং প্রবহমান এই খালটির রূপ কেড়ে নেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে মানুষ। কেননা প্রতি বছর ভয়াবহ বন্যায় এই খাল দিয়ে ভাটির দিকে পানি নেমে যায়। এ অবস্থায় খালে বাঁধ দেওয়ায় এবারের বন্যায় গ্রামের পর গ্রাম বানের পানিতে ভাসবে। এই আশঙ্কা স্থানীয় জনগণের।
অবশ্য স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলার মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হলে দখলবাজদের বিরুদ্ধে মামলাসহ তৈরি করা বাঁধ অপসারণের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তবে রহস্যজনক কারণে সে পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি। এতে এলাকার সচেতন লোকজনের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, রূপাই খালটি মগনামা ইউনিয়নের মৎস্য প্রজনন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের অন্যতম আধার। এই খালে মৎস্য আহরণ করে শত শত জেলে জীবিকা নির্বাহ করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মগনামা ইউনিয়নের ধারিয়াখালী, কাটাফাঁড়ি সোনালী বাজার অংশে রূপাই খাল জবরদখলের প্রতিযোগিতা অব্যাহত রেখেছে প্রভাবশালী ইখতিয়ার উদ্দিনসহ একদল দখলবাজ। তারা ইতিমধ্যে রূপাই খালের প্রায় ৫ একর পর্যন্ত দখলে নিয়ে বাঁধ তৈরি করেছেন। পাশাপাশি এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কেটে বসতভিটে তৈরি করে বিক্রি করছেন।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি সিরাজুল ইসলাম বলেন, রূপাই খালটি একসময় খরস্রোতা ছিল। খালটি বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিলিত। যার পশ্চিমে কুতুবদিয়া চ্যানেল, মিষ্টি পানির বিশাল উৎসও ছিল এই খাল। শুস্ক মৌসুমে গভীর এই খালের পানি দিয়ে ফসল উৎপাদন করে আসছে মগনামার কৃষকরা। মগনামা ইউনিয়নের দরদরিঘোনা থেকে এসে রূপাই খাল থেমে যায় লায়ন মুজিবের বাড়ির কাছে। আঁকাবাঁকা এই খাল দরদরিঘোনা, ব্যাঙকুয়ালঘোনা, বাইন্নাঘোনা, রূকেরচর, দারিয়াখালী ও কুমপাড়া হয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার বিস্তৃত। তবে কাটাফাঁড়ি সোনালী বাজার সড়কের আমজার বাড়ির কাছে দেওয়া বেড়িবাঁধে গতি থেমে যেতে শুরু করে, যা বিভিন্ন পয়েন্টে এখনও অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, এই খাল মগনামা ইউনিয়নের অর্থনীতির অন্যতম উৎস। এটি সরকারের বদ্ধ জলমহাল হিসেবেও শ্রেণিভুক্ত। এই খালের দুই পাড়ে মানুষের বসতি রয়েছে। সরকারের খাস জমিতে দরিদ্র মানুষ বসবাস করে আসছে যুগ যুগ ধরে। তারা এই খাল থেকে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। মধ্যম পূর্ব-দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের লোকালয়ের পানি এই খালের ওপর দিয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে নেমে পড়ে।
মগনামার লবণ চাষিরা জানান, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রূপাই খালের পানি চলাচলের মূল পয়েন্ট দখলে নেয়। এ নিয়ে প্রায় ৫ একর জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঁধ।
পেকুয়া উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির এক সদস্য জানান, রূপাই খালের রূপ কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় কয়েক দুর্বৃত্ত জড়িত রয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো শান্তি জীবন চাকমা জানান, রূপাই খালটি সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি। সম্প্রতি এই খালে বাঁধ দেওয়ার খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। দখলকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা যায়নি। তিনি বলেন, ওই দিন বাঁধের কিছু অংশ অপসারণ করা হয়েছে। এখন যদি আবারও সেখানে বাঁধ দেওয়া হয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পেকুয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, রূপাই খালে বাঁধ দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব-উল করিম বলেন, রূপাই খালে বাঁধ দেওয়া নিয়ে অভিযোগ আসার পর সরেজমিন সেই বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে কেউ খালে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: